মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার কার্যক্রম সোমবার ৬ ডিসেম্বর থেকে আবার শুরু হচ্ছে। বুধবার ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা তিনদিন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার এ বিচারিক কার্যক্রম চলবে।

সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হওয়ার পর গত ১ ডিসেম্বর থেকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামীরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে তাদের বক্তব্য প্রদান, আসামীদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী প্রদান, আদালতে কাগজপত্র দাখিল ইত্যাদি অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করেছে। ১৫ জন আসামীদের মধ্যে ৮ জন যথাক্রমে কামাল হোসেন, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, লিটন মিয়া, মোহাম্মদ রাজিব, সাফানুর করিম, নন্দদুলাল রক্ষিতকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের পক্ষে তাদের নিয়োজিত আইনজীবীরা আদালতে লিখিত বক্তব্য দেবেন বলে আসামীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন। বাকী ৭ জন আসামীকে সোমবার থেকে একই ধারায় পরীক্ষা করা হবে।

গত ১ ডিসেম্বর মামলার চার্জসীটের মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়। একইদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলামকে পঞ্চম দিনের মতো আসামী পক্ষের জেরা শেষ করার মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ খায়রুল ইসলাম এ মামলার ৬৫ নম্বর সাক্ষী। এর আগে এ মামলার চার্জসীটভূক্ত ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে আরো ৬৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আইও মোঃ খায়রুল ইসলাম বর্তমানে র‍্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত আছেন। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর এ মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ জামিলুল হককে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা জেরা সম্পন্ন করেন। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি জামিলুল হক ২০২০ সালের ৬ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত শুধুমাত্র ৮ দিন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মোহাম্মদ সৈয়দুল ইসলাম, এডভোকেট এসমিকা সুলতানা, এডভোকেট শাহ আলম, এডভোকেট আবুল আলা জাহাঙ্গীর প্রমুখ আদালতে উপস্থিত থাকবেন।

আসামীদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট চন্দন দাশ, এডভোকেট দিলীপ দাশ, এডভোকেট শামশুল আলম, এডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট এম.এ বারী, এডভোকেট নুরুল হুদা, এডভোকেট ওসমান সরওয়ার আলম শাহীন, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল, এডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ, এডভোকেট মোবারক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এর আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি। মামলাটি তদন্তভার দেওয়া হয় র‍্যাব-১৫ কে।

মামলার কার্যক্রম চলাকালে ১৫ জন আসামীকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম। আসামীদের মধ্যে ১২ জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তারা হলেন : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

আর যে ৩ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেননি, তারা হলো : টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব। আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়ার পর গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

এদিকে, এ মামলায় আরো যে ৬৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয় তারা হলেন-মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: দেলোয়ার হোসেন শামীম ও তামান্না ফারাহ, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম, ডা. রনধীর দেবনাথ, সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, মোক্তার আহমদ, ছেনোয়ারা বেগম, হামজালাল, আলী আকবর, ফরিদুল মোস্তফা খান, বেবী ইসলাম, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মোঃ মুনতাসীর আরেফিন, সার্জেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন, কর্পোরাল নুর মোহাম্মদ, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সৈয়দ মঈন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর এবং লেন্স কর্পোরাল মোঃ রুহুল আমিন, আহমদ কবির মনু, ধলা মিয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মোঃ জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট আনিসুর রহমান, কনস্টেবল কামরুল হাসান, রামু সেনানিবাসের ১০, এমপি ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান, র‍্যাব-১৫ এর এএসআই নজরুল ইসলাম, এসআই সোহেল সিকদার, পুলিশের কনস্টেবল শুভ পাল, এসআই মোঃ আমিনুল ইসলাম ও একই থানার কনস্টেবল পলাশ ভট্টাচার্য, জব্দ তালিকার সাক্ষী কনস্টেবল উসালা মার্মা, সেনা সদস্য হীরা মিয়া, র‍্যাব-১৫ এর নৌবাহিনীর সদস্য আবু সালাম, কাউন্টার ম্যানেজার নবী হোসেন, আবুল কালাম ও শহীদ উদ্দিন, সিনহাকে খুনের আগে-পরে বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোন রেকর্ডকারী গ্রামীণ ফোনের প্রতিনিধি মোঃ আহসানুল হক, রবি অপারেটরের প্রতিনিধি সৈকত আহমদ শিপলু, রাসায়নিক পরীক্ষক মিজানুর রহমান ও পিংকু পোদ্দার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, এসআই বাবুল মিয়া, এসআই রাশেদুল হাসান, এসআই হাশেম, এসআই মোহাম্মদ মুছা, এসআই আবদুল জলিল, এসআই আবদুল্লাহ আল হাসান, এএসআই মোঃ বাবুল মিয়া, এসআই নাজমুল হোসেন এবং এসআই সুমন কান্তি দে, এসআই কামাল হোসেন, পরিদর্শক মানস বড়ুয়া, কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন ও পরিদর্শক এ.বি.এম.এস দোহা।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।